মসজিদে নববী বর্তমান বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মসজিদ। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। মসজিদে নববী মুহাম্মাদ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় আসার পর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মদিনায় প্রবেশের পর রাসুল (সা.)-এর উটনি ‘কাসওয়া’ যে স্থানটিতে বসে পড়েছিল, সেই স্থানেই নির্মাণ করা হয় ঐতিহাসিক মসজিদে নববী। হিজরতের বছর অর্থাৎ ৬২২ সালে মসজিদে নববির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিলো। মুহাম্মদ (সা.) স্বয়ং নিজে মসজিদ নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন। ৬২৩ সালের মাঝামাঝি সময় এসে দীর্ঘ সাত মাস জুড়ে মসজিদে নববীর কাজ সম্পূর্ণ হয়৷ মদিনার দুই এতিম বালক সাহল ও সোহাইলের কাছ থেকে ১০ দিনারের বিনিময়ে জায়গাটি কিনে নেওয়া হয়। যা পরবর্তীতে হযরত আবু বকর (রা.) পরিশোধ করেন। জমির ছোট এক অংশে রাসুল (সা.)-এর জন্য বাসস্থান এবং বাকি পুরো অংশ জুড়ে নির্মাণ করা হয় মসজিদ। সে-সময় মসজিদ সম্মিলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আরব উপদ্বীপের মধ্যে এইখানেই সর্বপ্রথম বাতি জ্বালানো হয়।
মসজিদে নববীর স্থাপত্যসমূহ :
রিয়াদুল জান্নাহ: মসজিদের মধ্যে বিশেষ ছোট একটি এলাকা রয়েছে যার নাম রিয়াদুল জান্নাহ। রিয়াদুল জান্নাহকে জান্নাতের বাগান হিসেবেও দেখা হয়। সাহাবি আবু হুরাইয়া থেকে বর্ণিত যে, মোহাম্মদ (সা.) তার ঘর থেকে মিম্বর পর্যন্ত স্থানকে জান্নাতের অংশ বলেছেন।
রওজা: মসজিদের সাথেই রওজা অবস্থিত। এখানে নবী করিম (সা.) এবং ইসলামের প্রথম দুই খলিফা আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.) এর সমাধি রয়েছে। সমাধিগুলোর পাশেই আরেকটি সমাধি খালি রাখা হয়েছে। ইসলাম অনুযায়ী ভবিষ্যতে হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং মৃত্যু বরণ করার পর তাকে সেখানে দাফন করা হবে।
মিহরাব: মসজিদে মোট তিনটি মিহরাব রয়েছে। এর মধ্যে একটি মুহাম্মাদ (সা.) এর সময় নির্মিত হয় এবং বাকিগুলো পরবর্তী সময়ে নির্মাণ করা হয়।
মিনার: হযরত উমর (রা.) কর্তৃক প্রথম মিনারগুলো নির্মিত হয়। যার উচ্চতা ছিলো ২৬ ফুট (৭.৯ মি.)। পরবর্তীতে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের সংস্কার কার্যের পর মোট ১০টি মিনার নির্মাণ করা হয়। যার উচ্চতা ১০৪ মিটার (৩৪১ ফুট)। মিনারগুলোর উপর, নিচ ও মধ্যম অংশ যথাক্রমে সিলিন্ডার, অষ্টাভুজ ও বর্গাকার।
দরজা: রাসূল (সা.)-এর যুগে মসজিদে নববীতে মোট ৩টি দরজা ছিল। পরে উমর (রাঃ) এর যুগে মোট ৬টি দরজা হয়। সর্বশেষ সংস্কারের পর মসজিদে নববীতে বর্তমানে মোট ১১টি সদর দরজাসহ মোট ৮১টি দরজা রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে রয়েছে বাবে জিব্রাইল যে দরজা দিয়ে রাসূল (সা.) প্রবেশ করতেন। খন্দকের যুদ্ধের পর জিব্রাইল (আ.) এই দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলে একে ‘বাবে জিবরীল’ বলা হয়।
রাসূল (সা.) এর পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত হওয়ার কারণে মুসলমানদের সাথে রয়েছে এই মসজিদটির এক অপরিমেয় আবেগের বন্ধন। হজ্জের কোনো অংশ না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলমান হজ্জে এক ভিন্ন্য আবেগে মাসজিদুন নববীতে আগমন করেন। মুসলিম জাতির হৃদয়পটে রাসূল (সা.) এর প্রতি যে অফুরন্ত ভালোবাসার ফল্গুধারা বইছে, এটাই তার বহিঃপ্রকাশ।
জমজম ট্রাভেলস বিডি হজ্জ এবং উমরাহ পালনকারীদের জন্য মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে।